‘যাকাত’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বৃদ্ধি, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় ধনী ব্যক্তিদের নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ থাকলে নির্দিষ্ট অংশ গরিব ও অভাবী লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়াকে যাকাত বলে।
যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ ব্যক্তিবিশেষের হাতে পুঞ্জীভূত থাকে না। আর মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত থাকুক আল্লাহ তায়ালা তা পছন্দ করেন না । তিনি চান সম্পদ মানুষের কল্যাণে ব্যয় হোক, সমাজের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হোক । এ বিবেচনায় যাকাত অর্থ বৃদ্ধি । যাকাত প্রদানে দাতার অন্তর কৃপণতার কলুষ থেকে পবিত্র হয়। বিত্তশালীদের সম্পদে দরিদ্রের অধিকার আছে । কাজেই গরিবের নির্ধারিত অংশ দিয়ে দিলে অবশিষ্ট সম্পদ ধনীদের জন্য পবিত্র হয়ে যায়। এদিক বিবেচনায় যাকাত অর্থ পবিত্রতা। যাকাত দিলে সম্পদে আল্লাহ বরকত দান করেন।
ইসলামের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনের মধ্যে যাকাত অন্যতম । কুরআন মজিদের বহু জায়গায় সালাতের সাথে যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । আল্লাহ তায়ালা বলেন:
অর্থ : “আর তোমরা নামায কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর ।” (সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত ২০)
যাকাত হলো দরিদ্রের আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার । ধনীদের দয়া বা অনুগ্রহ নয় । বরং এটি আদায় করা ধনীদের উপর ফরজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
অর্থ : “তাদের (ধনীদের) ধন-সম্পদে অবশ্যই দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে ।” (সূরা আয্-যারিয়াত, আয়াত ১৯)
শরিয়তের বিধান অনুযায়ী নামায আদায় করলে, আদায়কারীর জন্য যেমন পুরস্কারের ঘোষণা আছে, তেমনি যাকাত (ফরজ হলে) আদায়কারীর জন্যও সুসংবাদ রয়েছে । যেমন, যাকাত দিলে মাল পবিত্র হয় এবং সম্পদে আল্লাহ তায়ালা বরকত দেন। যাকাত প্রদানকারীদের আখিরাতে অধিক পরিমাণ পুরস্কার দেওয়া হবে যা মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না। হাদিসে কুদসিতে আছে, “আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে বলেন, হে বনি আদম! আমার পথে খরচ করতে থাক। আমি আমার অফুরন্ত ভাণ্ডার থেকে তোমাদের দিতে থাকব” (বুখারি ও মুসলিম)।
যাকাত আদায়কারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন :
অর্থ : “আর আল্লাহ বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের সাথে আছি, যদি তোমরা নামায কায়েম কর এবং যাকাত দাও।” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ১২)
যাকাত দানকারীর পুরস্কার ও কৃপণ ব্যক্তির দুঃসংবাদ সম্পর্কে অন্য এক হাদিসে আছে, “দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী, আল্লাহর বান্দাদের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী । অপরদিকে কৃপণ আল্লাহ থেকে দূরে, আল্লাহর বান্দাদের থেকে দূরে এবং জাহান্নামের নিকটে। একজন জাহিল দানশীল একজন কৃপণ আবিদ অপেক্ষা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি পছন্দনীয়।” (তিরমিযি)
কেউ যদি সম্পদ জমা করে রাখে দরিদ্র ও বঞ্চিতদের প্রাপ্য যথাযথভাবে আদায় না করে, তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ সম্পর্কে কুরআন মজিদে বলা হয়েছে: আর যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদেরকে কষ্টদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও । সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে কপালে, পাঁজরে এবং পিঠে দাগ দেওয়া হবে, সেদিন বলা হবে এ তো সে সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে । এখন সে সঞ্চিত সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর । (সূরা আত্তাওবা: ৩৪-৩৫)
যাকাত ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যারা তা আদায় করে না এবং যাকাত দিতে অস্বীকার করে, তাদের ব্যাপারে ইসলামি বিধান হচ্ছে, পার্থিব জীবনে তারা কৃপণ হিসেবে আখ্যায়িত হবে এবং পরকালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে । আল্লাহ তায়ালা বলেন : “আর ধ্বংস ঐসব মুশরিকের জন্য, যারা যাকাত দেয় না ও আখিরাতকে অস্বীকার করে ।” (সূরা হা-মীম-আস্-সাজদাহ : ৬-৭)
ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.)-এর শাসনামলে কিছু লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করল। খলিফা তাদের ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সমতুল্য মনে করলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, মহানবি (স.)-এর যুগে যারা যাকাত দিত, তাদের মধ্যে কেউ যদি একটি ছাগলের বাচ্চা দিতেও অস্বীকার করে তবে তার বিরুদ্ধে আমি জিহাদ করব । হযরত আবু বকর (রা.)-এর বক্তব্যের যৌক্তিকতার সাথে নিম্নবর্ণিত হাদিসের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়। হাদিসে আছে, “আল্লাহর কসম, যারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়াই করব।” (বুখারি)
প্রত্যেক মুমিন বান্দার উচিত পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় যথানিয়মে যাকাত আদায় করা। অন্যকে যাকাত দানে উৎসাহিত করা। ইসলামি বিধানমতো যাকাত আদায় করে সমাজের অসহায় দরিদ্রের অবস্থার উন্নতি করা।
কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে যাকাত প্রদানের সুফল সম্পর্কে আলোচনা করবে। |
Read more